কখন বুঝবেন যে আপনার চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সময় হয়েছে ?

“আপনার জায়গা ছেড়ে যাওয়ার সময় হয়েছে কি না তা কীভাবে বুঝবেন ?”

উত্তর কী হবে ? কিছুক্ষণ ভাবুন, তারপর বাকিটা পড়ুন।

এই প্রশ্নের সহজ উত্তর বলতে গেলে প্রায় অসম্ভব। তবে একটা ওয়েবসাইটে আমি এর একটা অদ্ভুত উত্তর পেয়েছিলাম। উত্তরটা এত ভালো লেগেছিল যে এই উত্তরকেই উপরের প্রশ্নের সর্বোত্তম জবাব বলে আমি মনে করি।

ওয়েবসাইটে যা লেখা ছিল তা মোটামুটি নিচের মতো,

“যখন আপনার মনে হবে ঘরের মধ্যে আপনিই সবচেয়ে বুদ্ধিমান, তখন বুঝবেন যে আপনার এই জায়গা ছেড়ে যাওয়ার সময় হয়েছে।”

এবার আসি ব্যাখ্যায়। ওয়েবসাইটে ঐ লাইনের কোন ব্যাখ্যা দেওয়া ছিল না, আমি নিজেই এর একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছি। আপনারা মিলিয়ে নিতে পারেন।

ধরা যাক, আপনি কোন মিটিংয়ে বসেছেন। মিটিংয়ে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তা শুনতে শুনতে  আপনার কি কখনো মনে হয়েছে যে আলোচনায় যারা নিজ মতামত দিচ্ছেন তাদের চেয়ে আপনি বিষয়টা ভালো বুঝেন ?

 যদি আপনার মনে হয় যে আপনি ঐ বিষয়ে সবচেয়ে ভালো বুঝেন, তাহলে বুঝবেন যে ঐ রুমে আপনার থাকার কোন প্রয়োজন নেই।

কেন প্রয়োজন নেই ? কারণ রুমে যে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সে বিষয়ে আপনি অলরেডি সবকিছুই শিখে ফেলেছেন।

প্রতিষ্ঠানে একজন কর্মী শুধু প্রতিষ্ঠানকে দেয়ই না, সে প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক কিছুই নেয়ও। আমি বলছি পয়সা-পাত্তির বাইরের জিনিস, যেগুলো অক্ষয় এবং সবচেয়ে মূল্যবান সেগুলোর কথা। একজন কর্মী ম্যানপাওয়ার ম্যানেজমেন্ট, টাইম ম্যানেজমেন্ট, ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট শিখে, নিজের দক্ষতা বাড়ায়, কমিউনিকেশন স্কিল বাড়ায়। অফিসের পরিবেশটা বুঝে নিয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করতে শিখে। কীভাবে নিজের গুরুত্ব অন্যদের মাঝে বাড়াতে হয় সেটা শিখে।

আমি রুমের উদাহরণ দিয়েই ব্যাখ্যা করলাম। এমন অভিজ্ঞতা যখন কম-বেশি পুরো প্রতিষ্ঠান জুড়েই আপনার হয় তখন আপনি জায়গা ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করুন। কারণ আপনি নিজেকে পূর্ণ করে নিয়েছেন আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে। এখন আর এখান থেকে আপনার নেওয়ার কিছুই নেই। সময় হয়েছে জায়গা ত্যাগ করার।

আপনি হয়তো বলবেন যে পুরো প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বুদ্ধিমান হয়ে কীভাবে জায়গা ছাড়বেন! আসলে এখানে পুরো প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠান অনেক বড়। আপনি সবকিছুতে এক্সপার্ট হতে পারবেন না। আপনি শুধু বিবেচনায় নিবেন আপনার ঘাটতি ছিল কোন জায়গাগুলোতে, এবং এগুলোর উন্নয়ন কতটা করতে পেরেছেন। যদি মনে হয় যতটুকু নেওয়ার আপনি নিয়েছেন, তাহলে ভাবনা শুরু করুন।

কেন সবচেয়ে দক্ষ হবার পরপরই ছেড়ে দেবেন, তাই না?

আমার ব্যাখ্যাটাই বলি। যখন আপনি নিজেকে কোন বিষয়ে সবচেয়ে দক্ষ মনে করবেন, এর অর্থ হতে পারে আপনি আসলেই দক্ষ, অথবা আপনি নিজেকে যতটা দক্ষ মনে করছেন আসলে আপনি তা না। কিন্তু যেটাই হোক না কেন, আপনি মনস্তাত্বিকভাবে নিজের উপর কনফিডেন্ট। এমন পরিবেশে প্রায়ই আপনি দেখবেন যে আপনার দক্ষতা বা বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহারের জন্য যথার্থ সুযোগ আপনি পাবেন না। অর্থাৎ সবচেয়ে দক্ষ হবার পরেও (আই মিন নিজেকে দক্ষ ভাবার পরেও) আপনি দক্ষতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ পাচ্ছেন না বা আপনাকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তখন আপনার মনে হবে রুমের মধ্যে আপনিই সবচেয়ে বুদ্ধিমান, কিন্তু আপনার নিজেরও আর ইচ্ছা হবে না নিজের বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগানোর।

ঠিক এই সময়টাকেই আপনি মার্ক করবেন। নিজেকে প্রশ্ন করবেন, “রুমের মধ্যে যে টপিকটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সেটার পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন বিষয়ে আমিই কি সবচেয়ে ভালো বুঝি? অন্যদের চেয়ে আমার ধারণাটা কি নিখুঁত ? আমি কি পারবো আমার পরিকল্পনা মতো কাজটা তুলে নিয়ে আসতে ?”

উপরের লেখাগুলো পড়ে আপনার এতক্ষণে বুঝে যাওয়ার কথা।

দক্ষ হওয়া এত সহজ না। আপনি সব বিষয়ে দক্ষ হতে পারবেন না। তার প্রয়োজনও নেই। আপনার কারিগরী জ্ঞান থাকলে অন্য বিষয় শিখে নিন। টিমওয়ার্ক/ প্ল্যানিং/ অধীনস্তদের পরিচালনা/ সময় ব্যবস্থাপনা – কত কিছু আছে ! আপনি নিজে কারিগরী ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষ হলেও প্রতিষ্ঠানে আপনি অন্যান্য অনেক কিছু শেখার প্রতি জোর দিবেন। যতদিন নিজের এফোর্ট দিয়ে সেবা করতে পারছেন সেবা করুন। তারপর একদিন যখন মনে হবে “রুমের মধ্যে আমিই সবচেয়ে বুদ্ধিমান”, তখন বুঝবেন যে এই জায়গায় এখন আর আপনার দেওয়ার কিছু নেই, আপনার নেওয়ারও কিছু নেই।

আপনার এখন সময় হয়েছে জায়গা ছেড়ে যাওয়ার।

সবশেষে ক্রিকেট লিজেন্ড শচীন টেন্ডুলকারের একটা কথা বলি, যা তিনি ক্রিকেট থেকে নিজের অবসরের ঘোষণা দেওয়ার দিন বলেছিলেন,

“চলে যাওয়ার জন্য সর্বোত্তম সময় সেটাই, যখন সবাই জিজ্ঞেস করবে কেন চলে যাচ্ছ !”

শচীন কিন্তু বেশ ভালো ফর্মে থেকেও বিদায় নিয়েছিলেন, মর্যাদার সাথেই।

ধন্যবাদ।